গত ১৭ এপ্রিল (বৃহস্পতিবার) দিনাজপুরের বিরল উপজেলায় ভবেশ চন্দ্র রায়ের মৃত্যু নিয়ে বাংলাদেশের গণমাধ্যমগুলোতে ভিন্ন ভিন্ন তথ্য দেখা যায়। দ্য ডেইলি স্টার গত ১৮ এপ্রিল (শুক্রবার) তাদের দিনাজপুর জেলা প্রতিনিধির বরাতে সংবাদটির শিরোনাম লেখে: ‘দিনাজপুরে স্থানীয় হিন্দু নেতাকে ‘অপহরণ করে পিটিয়ে হত্যা’।’ সংবাদের ভেতরে দাবি করা হয়েছে, ভবেশকে জোর করে তুলে নিয়ে যাওয়ার দাবি করেছে পরিবার এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে বলা হয়, ভবেশকে নাড়াবাড়িতে নিয়ে যেতে দেখেছে তারা।
তবে অন্য কোনো গণমাধ্যমেই ভবেশকে বাড়ি থেকে জোর করে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে অথবা ভবেশকে পেটানো হয়েছে, এমন কোনো তথ্য প্রকাশিত হয়নি। ১৯ এপ্রিল প্রকাশিত সমকালের প্রতিবেদনে পত্রিকাটির দিনাজপুর প্রতিনিধি লিখেছেন, ভবেশের পরিবার জানিয়েছে তাকে জোরজবরদস্তি করা হয়নি, তিনি নিজ ইচ্ছাতেই মোটরসাইকেলে উঠে চলে যান। পরবর্তীতে রাত ১০টার দিকে মোবাইল ফোনে পরিবারকে জানানো হয় পান-বিড়ি খাওয়ার পর ভবেশ চন্দ্র রায় অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে একটি ভ্যানযোগে বাড়ির পার্শ্ববর্তী ফুলবাড়িহাটে পাঠানো হয়েছে। পরে পরিবারের সদস্যরা ফুলবাড়িহাটে গিয়ে ভবেশ চন্দ্র রায়কে অচেতন অবস্থায় পান। এরপর গ্রাম্য চিকিৎসক কৃষ্ণ কান্ত তাঁর রক্তচাপ মাপেন। তিনি জানান, অসুস্থতার সময় ভবেশের চোখ-মুখ বন্ধ ছিল। রক্তচাপ ছিল ওপরে ৭০ এবং নিচে নিল। পরে কৃষ্ণ কান্তের পরামর্শে তাঁকে দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
২০ এপ্রিল ঢাকা ট্রিবিউনে প্রকাশিত প্রতিবেদনটিতেও একই ধরনের তথ্যের উল্লেখ রয়েছে। একই প্রতিবেদনে নিহতের ছেলে স্বপন জানিয়েছেন, “তার বাবার মৃত্যু অস্বাভাবিক। তবে এটি অসুস্থ হয়ে নাকি আঘাতের মাধ্যমে সেটি এখনও নিশ্চিত নন। তিনি জানান, তার বাবাকে হত্যা করা হয়েছে, এমন কোনও তথ্য-প্রমাণ তাদের কাছে নেই।” মৃত্যুর ঘটনাকে এখনো হত্যা বলতে নারাজ তার পরিবার। পুলিশের দাবি অনুযায়ী, নিহতের শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি।
ডেইলি স্টারের প্রতিবেদনে ভবেশকে জোর করে নিয়ে যাওয়ার দাবি করা হলেও ঢাকা ট্রিবিউনের প্রতিবেদনটিতে নিহত ভবেশের স্ত্রী সান্ত্বনা রাণী জানান, “রতন ও আতিক সহ আরও ৪ জনের সঙ্গে তার স্বামী মোটরসাইকেলে যান। কীভাবে তার স্বামী মারা গেছে এখনও সঠিকভাবে বলতে পারছেন না তিনি।”
এদিকে ডেইলি স্টারের এই সংবাদের বরাতে দশটিরও বেশি ভারতীয় গণমাধ্যম বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ওপর চলমান নির্যাতন হিসেবে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এক্সে (টুইটার) বিবৃতি প্রকাশ করে বাংলাদেশে হিন্দু সংখ্যালঘুদের উপর নিপীড়নের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে একটি ধারাবাহিক নিপীড়নের চিত্র ফুটে উঠছে। তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশে হিন্দু সংখ্যালঘু নেতা ভবেশ চন্দ্র রায়-এর অপহরণ ও নির্মম হত্যাকাণ্ড আমাদের অত্যন্ত ব্যথিত করেছে। ’’
এর প্রত্যুত্তরে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম দিনাজপুরে ভবেশ চন্দ্র রায়ের মৃত্যুর ঘটনায় ভারত সরকারের দাবিকে প্রত্যাখ্যান করেছেন।